No menu items!

অ্যালার্জি রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

Must Read

কেন একজন মানব শিশুর জীবনে প্রথম ১০০০ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ ?

   কেন একজন মানব শিশুর জীবনে প্রথম ১০০০ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ ?   গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবারের মাধ্যমে শিশু যে পুষ্টি পায়...

মহাত্মা হ্যানিম্যানের আজ ২৬৮তম জন্ম বার্ষিকী

মহাত্মা হ্যানিম্যান  আজ ১০ এপ্রিল রোজ সোমবার, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার  জনক   ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেডিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর ২৬৮তম জন্মদিন । শুভ জন্মদিন...

বিশ্ব ঋতুস্রাব স্বাস্থ্যবিধি দিবস

বিশ্ব ঋতুস্রাব স্বাস্থ্যবিধি দিবস ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড প্রতিটি নারী ও কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু এ অতি...

অ্যালার্জি রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

অ্যালার্জি শব্দটা গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে । যার বাংলা প্রতিশব্দ অপছন্দ। ক্লিমেনস ফন পির্কে নামের একজন অস্ট্রিয়ার শিশু বিষয়ক চিকিৎসক ১৯০৬ সালে এই ‘অ্যালার্জি’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। গ্রিক ভাষায় ‘অ্যালো’ মানে ‘ভিন্ন’ এবং ‘আরজন’ মানে ক্রিয়া। তাই অ্যালার্জি কথাটার মানে দাঁড়ায় ‘ভিন্ন ধরনের ক্রিয়া। যেসব জিনিস থেকে এ ধরনের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয় (যেমন ফুলের রেণু বা সাবানে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ) তাদের বলা হয় অ্যালার্জিন। এ ধরনের অ্যালার্জিনের সংখ্যা পৃথিবীতে অগণিত।

এক্ষেত্রে এমন বললেও ভুল হবে না, পৃথিবীর যেকোনো জিনিস থেকেই অ্যালার্জি হওয়াটা অসম্ভব হিছু নয়। সচরাচর আমরা জানি  অ্যালার্জিন হলো বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, ধুলো, ফুলের রেণু, কিছু ওষুধ এবং রাসায়নিক পদার্থ। সংবেদনশীল (অ্যালার্জিক) মানুষের ওপর অ্যালার্জিনের প্রতিক্রিয়া তখনই বুঝা যায়, যখন শরীরের সংগে বস্তুটির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ঘটে। এ প্রত্যক্ষ যোগাযোগ চার প্রকারে হতে পারে : (১) স্পর্শের মাধ্যমে, যেমন- কসমেটিক,  (২) কোনো কিছু খেলে, যেমন- গরুর দুধ, (৩) সুচি প্রয়োগে, যেমন টিকা, (৪) নিঃশ্বাসের মাধ্যমে, যেমন- ফুলের রেণু, । এ সকল ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন নিঃশ্বাসের সাথে অ্যালর্জিন গ্রহণ করলে শ্বাসকষ্ট হয়। অ্যালার্জিনটি খাবার হলে বমি বমি ভাব, বমি, পেট খারাপ বা পেটের অসুখ হয়। অ্যালার্জিনটি কসমেটিক কিংবা কৃত্রিম রং হলে চর্মের সংস্পর্শে তা ফুসকুড়ি চুলকানি বা পানিভরা ফোসকা সৃষ্টি করবে।

allergy

অ্যালার্জির কারণ : 

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অ্যালাজির্র প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য যে পরীক্ষা করা হয় তার নাম ‘প্রাউসনিৎস-কুস্টনার বিক্রিয়া’। হাইনৎস কুস্টনার (১৮৯৭-১৯৩১) তার আবিষ্কারক। তিনি একজন জামার্ন স্ত্রীরোগ বিশারদ ছিলেন  । তার  অ্যালারজি ছিল রান্না করা মাছে। রান্না করা মাছ খেলেই তার গা চুলকাতো, হাঁচি-কাশি এবং বমি হতো। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর এসব প্রতিক্রিয়া বন্ধ হতো।

কুস্টনারের এ গবেষণায় এগিয়ে এলেন তৎকালীন জার্মান জীবাণুতত্ত্ববিদ কালর্ ভিলহেলম প্রাউসনিৎস (১৮৬১-১৯৩৩)। তিনি কুস্টনারের রক্ত থেকে কিছু সিরাম (রক্তের পানীয় অংশ) নিয়ে তার নিজের রক্তের সঙ্গে মিশিয়ে দেন ইনজেকশনের মাধ্যমে। তারপর রান্না করা মাছের নির্যাসের ইনজেকশন দেন তার শরীরের একই জায়গায়, যেখানে রক্তের সিরামের ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল। ইনজেকশনের পরপরই তিনি হতবাক হয়ে দেখলেন যে, কুস্টনারের দেহের প্রতিক্রিয়াগুলো তার শরীরেও স্পষ্টভাবে  প্রতীয়মান। প্রাউসনিৎসের পরীক্ষার দ্বারা তার ‘রিয়াজিন’ তত্ত্ব প্রমাণিত হয়। অথার্ৎ তার মতে সংবেদনশীল মানুষের রক্তে এক ধরনের বিশেষ পদার্থ আছে, যার নাম রিয়াজিন (রিএজেন্ট থেকে রিয়াজিন)। এই রিয়াজিন এবং অ্যার্লাজিনের বিক্রিয়ার  ফলেই মানুষের শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

ইম্যুনোগ্লোবুলিন : 

স্বাভাবিক মানুষের রক্তে সাধারণত এই রিয়াজিন থাকে না। বতর্মানে এই রিয়াজিনকে বলা হয়, ‘ইম্যুনোগ্লোবুলিন এই ইম্যুনোগ্লোবুলিনই হল অ্যান্টিবডিজ’। এখানে অ্যান্টিবডি হচ্ছে ওই সব রাসায়নিক পদার্থ যা অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে সৃষ্টি হয়। অথার্ৎ যখনই কোনো বহিরাগত প্রোটিন দেহে প্রবেশ করে, তখনই আমাদের শরীর তাকে শত্রু বলে চিহ্নিত করে এবং এর বিরুদ্ধে রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করতে শুরু করে। যেসব পদার্থ প্রোটিনের বিরুদ্ধে রাসায়নিক পদার্থ  তৈরি করতে শরীরকে বাধ্য করে তাদের বলা হয় অ্যান্টিজেন (গ্রিক ভাষায় অ্যান্টিজেন অর্থ আমি সৃষ্টি করি)। বস্তুত সব অ্যালাজির্নই  হলো অ্যান্টিজেন। এসব অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে শরীর যেসব রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে তাকে বলা হয় অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডি ও প্রোটিন অণুই আমাদের  রক্তের সঙ্গে মিশে থাকে।

অ্যালার্জি রোগের  লক্ষণ সমূহ:

সর্দি  ও বারবার হাঁচি হওয়া, চোখ চুলকানো, চোখ থেকে জল পড়া, লাল হয়ে যাওয়া নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, ডায়রিয়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর আসা, বমি পাওয়া, গলা এবং জিভ শুকিয়ে আসা, গলা খুশখুশ করা । যেকোনো একটি লক্ষণ দেখে যদি বুঝতে না পারেন আপনার অ্যালার্জি হয়েছে কি না তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি সম্ভব হয়  নিজেকে প্রশ্ন করে সমস্যা গুলো খাতায় লিখে রাখুন। যখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন তখন তার বলতে বা বুঝাতে সুবিধা হবে। যেমন-এই ধরনের প্রতিক্রিয়া কখন হয়। বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে না কি নির্দিষ্ট কিছু খেলে এই ধরনের সমস্যায় পড়েন । শরীরের বিভিন্ন অংশে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় কি না । এই প্রতিক্রিয়াগুলোর জন্য আপনি কতটা অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। বাড়ি পরিষ্কার করার সময় বারবার হাঁচি হয় কি না । কী ধরনের খাবার খেলে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। আপনার পোষ্য কাছে এলে কোনো রকম সমস্যা হয় কি না। নিচে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি নিয়ে আলোচনা করা হল :

বিভিন্ন প্রকার অ্যালার্জির: 

ফুড এলার্জি : অনেক সময় দেখা যায় খাবার থেকে বিভিন্ন  ধরনের এলার্জি হয়।যেমন-ডিম, দুধ, ময়দা,সি-ফুড থেকে এলার্জি হতে পারে।
সান এলার্জি: অনেকেই সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না  এবং এই সূর্যের আলো  থেকে যে  এলার্জি হয় তাই হল সান এলার্জি ।
ডাস্ট অ্যালার্জি: বাড়িতে আমাদের ব্যবহৃত  তোশক, বালিশ, বিছানা বা পুরনো জিনিসে যে ডাস্টমাইট থাকে সেগুলো থেকে ডাস্ট অ্যালার্জি হয় ।
কসমেটিক অ্যালার্জি: শ্যাম্পু, মেক-আপ, ময়েশ্চারাইজার, ডিওডরেন্ট থেকে অ্যালার্জি হলে তাকে কসমেটিক অ্যালার্জি বলা হয়।এর ফলে ত্বকে চুলকানি লক্ষ্য করা যায়।
একজিমা: সাধারণত ত্বক কোনো কিছু সহ্য করতে না পারলে চুলকানি বা র‌স বেরিয়ে একজিমা হয়।
ল্যাটেক্স এলার্জি: ল্যাটেক্স বা প্রাকৃতিক রবার থেকে অনেক সময় এলার্জি হতে পারে।

এলার্জি রোগীর জন্য অবশ্যই  পালনীয় :

সকাল বেলা বাড়ির সব জানালা দরজা খুলে দিন যাতে ঘরে যথেষ্ট আলোবাতাস আসতে পারে। সপ্তাহে একবার সারা বাড়ি ভালো করে পরিষ্কার করুন। যে সব খাবার খেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন তা যত সুস্বাদুই হোক না কেন, খাওয়া বন্ধ করুন। অনেকেই বেগুন খেতে পারেন না। খেলেই মুখ চুলকায়,সেক্ষেত্রে বেগুন ভাজা বা বেগুনের তরকারির বদলে বেগুন ভর্তা খেতে পারেন । কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেগুনের বিচি থেকেই মুখ চুলকায়। বেগুনের ভর্তা বা বেগুন পোড়া খেলে সেই সমস্যা থাকে না । ধুলোময়লায় সমস্যা হলে বাড়িতে কার্পেট ব্যবহার করবেন না। বেড কাভার বা বালিশের ওয়াড় বদলানোর সময় নাকে রুমাল বেঁধে নিন। বাড়িতে কোনো পোষা প্রাণী থাকলে কখনও বেডরুমে রাখবেন না। ওদের শোয়ার ঘর হতে আলাদা ঘরে রাখুন। ডিটারজেন্ট বা সলভেন্ট ব্যবহার করার সময় গ্লাভস পড়ুন। যদি দেখেন দুধ খেলে শারীরিক সমস্যা হচ্ছে তা হলে দুধের বদলে ছানা বা দই খান।  চিংড়ি মাছে সমস্যা থাকলে যতটা সম্ভব কম খান। তার বদলে ভাত বা নুডলসের ভিতরে অল্প পরিমাণে কুচো চিংড়ি দিয়ে খেতে পারেন। খাদ্য,পরিবেশ ও ঔষধ দ্বারা এলার্জি হলে এই গুলো নিয়ন্ত্রন করা জরুরী।

অ্যালার্জি রোগের  চিকিৎসা :

অ্যালাজির্র ভালো চিকিৎসা হচ্ছে,  অ্যালাজির্ক জাতিয় খাবার না খাওয়া। অ্যালাজির্নকে এড়িয়ে চলা।  এক্ষেত্রে অসুবিধা হলো তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা। আমাদের চার পাশে বহুবিধ জিনিস আছে এবং তাদের যে কোনো একটার ফলেই অ্যালাজির্র লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো হোমিওপ্যাথিতেও  অ্যালাজির্র ভালো ভালো ওষুধ রয়েছে। যেমন- ধূলাজনিত  অ্যালার্জিতে   আসের্নিক অ্যাল্বাম, ব্রোমিয়াম, হিপার সালফ ভালো কাজ করে। ফুলের রেণুতে যাদের অ্যালাজি   হয় তাদের জন্য অ্যালিয়াম সেপা, অ্যামোন কার্ব, ন্যাট্রাম সালফ ইত্যাদি ওষুধ। দুধে যাদের অ্যালাজির্ তাদের জন্য রয়েছে, ক্যালকেরিয়া কার্ব, চায়না, ন্যাট্রাম কার্ব ইত্যাদি। তবে ঔষধ খাওয়ার  ক্ষেত্রে অবশ্যই  অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন । দেখবেন এলার্জিরমত কঠিন রোগ হতে আপনি মুক্তি পেয়ে যাবেন সহজেই।

তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া  ও  ইনটারনেট  ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest News

কেন একজন মানব শিশুর জীবনে প্রথম ১০০০ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ ?

   কেন একজন মানব শিশুর জীবনে প্রথম ১০০০ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ ?   গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবারের মাধ্যমে শিশু যে পুষ্টি পায়...

More Articles Like This